MASIGNASUKAv102
6510051498749449419

সাধারণ জীবনের গল্প সিরিজ - একজন সিএনজি চালক

সাধারণ জীবনের গল্প সিরিজ - একজন সিএনজি চালক
Add Comments
Thursday, October 22, 2020

 সাধারণ জীবনের গল্প সিরিজ

একজন সিএনজি চালক



সিএনজি এমন একটা বাহন যা শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়। এটা Compressed Natural Gas এর সাহায্যে বলে তিনচাকার সবুজ রঙ্গের এই বাহনকে সিএনজি বলে। ড্রাইভারসহ প্রমাণ সাইজের ছয়জন মানুষ একসাথে এই বাহনে চড়ে যেতে পারেন। শহর এলাকায় কিংবা মফস্বলে এই বাহনের চল আছে। যদিও নতুন আইন অনুযায়ী মহাসড়ককে এদের চলাচল বারণ। 

কিন্তু পেটের দায় কী আর নিয়ম মানে? কোনোদিন বাস না চললে বা হঠাৎ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়লে বেশি টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া করে তারা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মহাসড়ককে চলার অপরাধে প্রায়ই পুলিশ ধরে জরিমানা করে। 

আবার কখনও কখনও চালককে আটক করে।তার লাইসেন্স কেড়ে নেয়। অনির্বাণ বলছে- আমি একজন সিএনজি চালককে চিনি। সে প্রায় 8 থেকে 10 বছর সিএনজি চালিয়েছে। মাত্র 16 বছর বয়সে সে গ্যারেজে কাজ করতে শুরু করে।এরপর টুকটাক লেগুনা,রিকশা চালিয়েছে। ড্রাইভিং শেখার পর প্রাপ্তবয়স্ক হতেই সে সিএনজি চালানো শুরু করে। 

সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত সে কাজ করতো। দিনে হয়তো কোনদিন 700 থেকে 800 টাকা আবার কোনদিন হাজার থেকে বারোশো টাকা আয় হতো। মালিক নিতেন তার ভাড়া, তেল খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা তার থাকতো। সংসার খরচ চলতো। তারপর 28 বছর বয়সে সে কোটিপতি হয়। প্রথমে একটা ছোট দোকান থেকে শুরু করে। এ

রপর নাটকের মতোই জীবনের গল্পটা এগোয়। বড় একটা কোম্পানিতে কাজ করতো সে আর তারপর সেই কোম্পানিরই অংশীদার হয়। ব্যবসায়িক ভাষায় যাকে বলে বিজনেস পার্টনার। ইনভেস্ট করতে থাকে। ভালো সিদ্ধান্ত নেয় কিছু। 

বলা বাহুল্য এর মধ্যে দুই-একটা বাজে সিদ্ধান্তও ছিলো। লোকসান হয়েছে কিছু। পুরো রাস্তাটা চলা এতটা সহজ ছিল না। এবার দুই বছরের মধ্যে সে কোটিপতি হয়। নতুন কোম্পানি চালু করে। বেসরকারি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। সরকারি কিছু কাজে Invest করে। কয়েকটা প্রকল্পের কাজে সহযোগিতা করে। কাজের গতি আর quality ভালো হবার কারণে বেশ প্রশংসা পায় সে। কিন্তু এই দুইবছর সময়টা কঠিন ছিলো। মনের মধ্যে সবসময় ভয় কাজ করতো।

উপস্থাপক: কেন?
অনির্বাণ: যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়। যদি বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। ভয় লাগতো।
উপস্থাপক: তারপর?

অনির্বাণ: তারপর সমাজে আজ সে প্রতিষ্ঠিত। অনেক অনেক টাকা তার। দামি গাড়ি, বাড়ি, ভালো পোশাক সবই আছে তার।
উপস্থাপক: এইসব কথা কি সে আপনাকে নিজে বলেছেন? এত সূক্ষ্ণ বিবরণ আপনি কিভাবে দিচ্ছেন? না মানে, মনের ভেতরে কি চলছে, তিনি কি ভাবছেন সবটাই জানেন বুঝি?

অনির্বাণ একটু হেসে বলে- হ্যাঁ। কারণ সেইদিনের সেই সিএনজিচালক আজকের অনির্বাণ হয়ে আপনাদের সামনে টকশোতে কথা বলছে! একজন সাধারণ লোক হলে আজকে আমার কথা বা আমার জীবনের গল্প কেউ শুনতো? কত গল্পই তো ঢাকা পড়ে যায় আড়ালে। আমার জীবনী লেখার ইচ্ছে নেই। ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই। তবে বই পড়তে খুব ভালোবাসি। 

আমার জীবনের গল্প হয়তো অন্য কাউকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আপনি জানেন, কাঁচাবাজারে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারে কতটা প্রভাব ফেলে? আমিও চাইতাম, আমার একটা লটারি উঠুক। উঠেছিলো একবার জানেন? দশ টাকার লটারি কিনে এক হাজার টাকা জিতেছিলাম। সেই থেকে আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়েছে। 

আসল ঘটনা তো তখন ঘটলো যখন লেখাপড়া না জানার কারণে আমাকে অশিক্ষিত, মূর্খ বলে গালাগালি করা হলো! আমার বড় ট্রেনিং নেই। ডিগ্রি নেই। কে চাকরি দেবে আমাকে? পরিবারের সবার দায়িত্ব সামলেছি। 

এখন আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে বলে মনে হলো তখন। এবার নিজের জন্য ভাবতে গিয়ে দেখি আমার অর্জনের খাতা শূন্য! আমাদের সমাজব্যবস্থায় একটা ছেলে সন্তানের কাছে অনেক প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু কখনো কখনো ছোট ছোট ঘটনা জীবনে খুব বড় প্রভাব ফেলে। আমি মনে করি, এইক্ষেত্রে কিছুটা রাগ থাকা ভালো।

উপস্থাপক: কাউকে দোষী করতে চান?
অনির্বাণ: নাহ।
- কোনো অভিযোগ আছে?

- নাহ। আমি তো বরং জীবনের কাছে ঋণী। এখন আমার অন্যান্য কাজের সাথে একটা সিএনজি গ্যারেজ আছে। ১০০ টার বেশি সিএনজির মালিক আমি। অথচ কোনো একসময় আমি ভাড়ার সিএনজি চালাতাম। জীবনে যা ঘটে তার জন্য হয়তো সবসময় আমি বা আমরা দায়ী থাকি না। অতঃপর জীবন এগিয়ে চলে আর সময়ের সাথে সাথে গল্পটাও পাল্টে যায়। হয়তো চিরকালের মতো, চিরদিনের জন্য।