MASIGNASUKAv102
6510051498749449419

আবার_তুমি_বারবার_তুমি।

আবার_তুমি_বারবার_তুমি।
Add Comments
Monday, November 12, 2018
পাঁচ বছর কেটে গেছে। ঊর্মির সাথে কোন যোগাযোগ ছিলোনা । গতমাসে কানাডা থেকে ফিরার পরে বন্ধু পাপ্পুর সাথে মিট করি। ঊর্মিদের বাসা ওদের মহল্লাতেই ছিলো। কথা প্রসঙ্গে ঊর্মির কথা জানতে চাইলাম। পাপ্পু জানালো স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়াতে ডিভোর্স নিয়েছে প্রায় ১ বছর হলো। আমি ডিটেলস জানতে চাইলে পাপ্পু বললো, বিয়ের পরেই স্বামী প্রবাসে চল যায়। বলেছিলো ২ বছর পরে একেবারে চলে আসবে। এসেছিলো ঠিকই, তবে ছুটিতে এসেছিলো। ঊর্মির এটা পছন্দ হলোনা।

তবুও সংসার ভাঙ্গার চিন্তা করেনি। ঊর্মির মামা এবং ঊর্মির স্বামী একদেশেই থাকতো। ঊর্মির মামার কাছে ওর স্বামীর কিছু কুকীর্তি ফাঁস হওয়াতে সংসারটা আর টিকলো না। ওর স্বামী ঐদেশে নিয়মিত পতিতালয়ে যেতো, জুয়াতেও অনেক টাকা নষ্ট করেছে। পাপ্পুর কাছে ঊর্মির ফোন নাম্বার চাইলে পাপ্পু সংগ্রহ করে দেয়। অনেক দিন পরে যখন দুজনের কথা হয় আমি প্রচুর উৎকন্ঠায় ছিলাম। মিট করার কথা বললে ঊর্মি রাজি হয়।


ঘন্টাখানি ধরে রেস্টুরেন্টে বসে আছি। ঘড়িতে বেলা ১২টা ১০। অপেক্ষা সবসময় বিরক্তিকর হলেও এখন মন্দ লাগছে না। রেস্টুরেন্টে মোটামুটি অনেক মানুষ, হালকা কোলাহল। রেস্টুরেন্টের সাজসজ্জা, আশেপাশে মানুষের খাওয়া এসব দেখে দেখে সময় পার করছি। বেয়ারা এসে এক কাপ গ্রিন টি দিয়ে গেলো আর কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইলো।

 বল্লাম আরেকটু পারে জানাবো, এখন কিছু লাগবে না। ঊর্মি আমার সাথে কখনোই রেস্টুরেন্টে আসতে চাইতো না। আমরা কলেজ ক্যামপাসেই ঘুরতাম। এই প্রথম ওর সাথে রেস্টুরেন্টে মিট করতে যাচ্ছি। ফোন দিলাম আবার, ঊর্মি বললো জ্যামে আটকে আছে। আর অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবে। ভাবতেই অবাক লাগে আমাদের সেই ছোট্ট জেলা শহরটা এখন কতটা ব্যস্ততম হয়ে গেছে! এখানেও এখন যানজট।

ঊর্মির সাথে আমার পরিচয় হয় ফেসবুকের মাধ্যমে। এক সাহিত্যগ্রুপ থেকে আমি ওকে পাই। তখন আমি বিবিএ লাস্ট সেমিস্টারে। আমিই প্রথম নক করি ওকে। আস্তে আস্তে পরিচয় হয়। আমরা একই জেলাতে ছিলাম। অল্পস্বল্প কথাবার্তা হতো। আমি ওকে দেখতে চাইলাম। চ্যাটে বল্লাম,

--আমি জানি মেয়েদের ছবি চাওয়া হেংলামী পর্যায়ের কাজ। কিন্তু আপনাকে দেখার ইচ্ছে প্রবল। ছবি দেবেন? পর্দা করলে থাক, দিতে হবেনা।
ঊর্মি হেসে হেসে বললো,

--হ্যা, আপনারা পুরুষ মানুষতো হ্য়াংলামী ছাড়া থাকতে পারেন না। আজ পিক চাইছেন কাল প্রপোজ করবেন।
সেদিন আমি বলেছিলাম, আমি কখনোই তাকে প্রপোজ করবো না, প্রমিস করেছিলাম।

তার দুদিন পরে ঊার্মি নিজে থেকেই ছবি দিলো। আমার বিশ্বাস হলোনা এটা ওর ছবি। অনেক সুন্দর ছিলো ছবিটা। আস্তে আস্তে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হলো। ও তখন সবেমাত্র অনার্সে ভর্তি হয়েছে। আমাদের বন্ধুত্বটা গাড়ো হচ্ছিলো খুব। ও আমাকে অনেক গুলো করে পিক পাঠাতো। সাধারনত ও ফেসবুকে ছবি আপলোড দিতো না।

আমার পুরুপুরি বিশ্বাস হতোনা এটা ওর ছবি কি না! ধারনার বাইরে ছিলো ওর সৌন্দর্য। এভাবে ৫-৬ মাস কেটে গেলো। মাঝে মাঝে ঝড়গা হতো খুব। একে অন্যকে ব্লক মারতাম। অনেকদিন পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতাম। কেনো জানি ওকে ছাড়া থাকতে কষ্ট লাগতো। ও আমার কাছে সব শেয়ার করতো। এমনকি এক্স রিলেশনের বিভিন্ন কথাও। একদিন ওর একটা সমন্ধ আসলো। ছেলে নাকি দারুন হেন্ডসাম। ওর অনেক পছন্দ হলো।

 খুব উৎসাহ নিয়ে আমাকে বলতে লাগলো। পিকও পাঠালো আমাকে। আমিতো দেখে চমকে উঠলাম। আমার হাইস্কুলের ক্লাশম্যাট সুমন। এসএসসি দিয়েই চলে গেছে প্রবাসে। সুমন আমার পরিচিত দেখে ঊর্মিও খুব অবাক হলো। আমার কাছে ডিটেলস জানতে চাইলে আমি সবটাই বল্লাম। ঊর্মি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। সুমনের পরিবার নাকি বলেছে সুমন অনার্স পাশ। ওদরে মিথ্যা কথা শুনে ঊর্মি মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। তাছাড়া ওদের এলাকাটাও ঊর্মির পছন্দ হলো না।

আমি বলেছিলাম সুমন এমনিতে ভালো ছেলে বিয়েটা করতে পারো। সে যাইহোক, ওটা আর হলোনা। এ ঘটনাটা ঊর্মির মনে দাগ কেটেছিলো খুব। প্রায়ই স্বরণ করতো ঘটনাটা। তখনকার আরেকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলি, আমার একটা বন্ধুর ছবি ঊর্মিকে দেখাই। বন্ধুটা দেখতে মাশআল্লাহ্, দারুন হ্যান্ডসাম,পড়ালেখাতেও ভালো। ঊর্মি ছবিও বন্ধুকে দেখাই। বন্ধু পছন্দ করলো, লাইন ঠিক করতে রাজি হলো।

 কিন্তু ঊর্মি রাজি হলোনা। এদিকে আমি আমার শপথ ঠিকই রাখছিলাম। প্রপোজ দেইনি ওকে, ওকে নিয়ে ওসব ভাবতামও না। এভাবেই আমাদের ফ্রেন্ডশিপ বছর অতিক্রম করলো।সেইবার মাসটা ছিলো অক্টোবর। ঊর্মি বলতেছিলো আমাকে সে ফিল করে। বর হিসেবে হলে দারুন হবে। আমি প্রশ্ন করলাম ভালোবেসে ফেলেছো নাকি? ও বললো, ভালোবাসা কিনা জানেনা, তবে ঐধরনের ফিল আসে।

আমি বললাম,

-আমিতো শপথ করেছি তোমাকে প্রপোজ করবো না। তানাহলে করে দিতাম এখনি।
ঊর্মি বললো, চলেন মিট করি। সামনাসামনি কথা বলি। দেখাযাক কি হয়।

আমি সায় দিলাম। আমাদের কলেজেই আমরা দেখা করলাম। সেদিন আমি লেট করে ফেলছিলাম খুব। ইচ্ছে ছিলো গোলাপ সমেত প্রপোজ করবো। বারবার ঊর্মির কল পেয়ে চলে আসলাম। গোলাপ কিনার সময় পেলাম না। কলেজে ঢুকেই দেখলাম ঊর্মি ওর বান্ধবীদের সাথে কমনরুমের সামনে দাড়িয়ে। ও ছিলো বোরখা পরা, মুখে নেকাব লাগানো। বোরখার রং এবং হিজাবের রং দেখে সনাক্ত করে ফেললাম। আমি না দেখার ভান করে সাইড কেটে চলে গেলাম। আমার খুব ভয় হচ্ছিলো।

কি কথা বলবো, কিভাবে শুরু করবো কিছুই বুঝতেছিলাম না। আমি অনার্স ভবনের সামনে চলে গেলাম, তারপর ওকে কল দিলাম। ও আমর কাছে আসলো। যখন আমি ওর সামনে যাই খুব নার্ভাস লাগছিলো। হাতপা কাপছিলো। মেয়েদের সাথে আমি খুব কম মিশতাম। স্কুল কলেজে আমার কোন মেয়ে বন্ধু ছিলোনা। আমরা সেদিন প্রায় এক ঘন্টা একসাথে ছিলাম। আমি শুধু ওর চোখ দুটু দেখেছিলাম সেদিন। ও নেকাব খুলেনি। হালকা রিকোয়েস্টও করি, কিন্তু ও খুলবে না।

আমি অবশ্য তাতে কোন কিছু মনে করিনি। আমার নার্ভাসনেস বুঝতে পারতেছিলো ও। আমাকে নরমাল করার ট্রাই করতেছিলো। ও একবার মুখফুটে বলেই ফেললো, গোলাপ এনেছি কি না। আমি না সূচক ভঙ্গিতে বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। বুঝতে পারছিলাম ও চাচ্ছে আমি যেনো প্রপোজ করি। বিদায়ের সময় আমি রাস্তার মোড়ে পাঁচ মিনিট দাড়াতে বল্লাম। আমি দ্রুত একটা লাইব্রেরিতে ঢুকে রবীন্দ্রনাথের “শেষের কবিতা” নিলাম। আমার অন্যতম একটি প্রিয় বই। দোকানিকে বল্লাম র্যাপিং করতে।

 এই ফাকে আমি একটা ফুলের দোকান থেকে দুটো গোলাপ এনে দিলাম। বইয়ের উপর আটকে দিলাম গোলাপ দুটু। একটা A4 সাইজের খামে গিফটটা ঢেকে নিলাম। মেসেঞ্জারে ও বারবার বলতেছিলো ও আর দাঁড়াতে পারবে না, আশে পাশে নাকি অনেক পরিচিত মুখ। দূর থেকে দেখলাম ও রিক্সা নিয়ে নিছে এবং চলে যাচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি দৌড় দিলাম। দৌড়ে যেয়ে ওর হাতে খামটা পৌছে দিলাম। মুখে বলা হলোনা ভালোবাসি।


সেদিন রাতে আমদের মিট করা নিয়ে কথা হলো। আমি শুনতে চাইলাম আমাকে দেখে কেমন লাগলো। ও ভালো বললো। আমিও বললাম, আমরো ভালো লেগেছে ওকে। ও জানতে চাইললো, মুখ না দেখেই ভালো লেগে গেলো? আমি হ্যা বললাম, তাছাড়া ছবিতেতো অনেক দেখেছি। ওর কথাবলা, আচার-ব্যবহার খুবই ভালো লেগেছিলো। আমার সম্পর্কে ও বল্লো আমাকে দেখে ও নাকি ফিদা। দুজনের ভালো লাগা সে রাতে ভালোবাসায় পরিনত হলো। একে অপরকে লাভ ইয়ু বলা হলো। আমি বই গিফট করেছি বলে ওর মন খারাপ হলো। ও বই পড়েনা, রবীন্দ্রনাথের লেখা নাকি মাথায়ই ঢুকেনা।

যাইহোক, এরপর আমাদের রিলেশন ভালোই চলছিলো। ও চাচ্ছিলো এখনি বিয়ে করে নিতে। আমি তখন বেকার, সবে মাত্র রেজাল্ট বেড় হইছে। আমি বল্লাম আমকে এক বছর সময় দাও। ও বলছিলো ওর বাসা থেকে খুব চাপ দিতেছে বিয়ের জন্য। আমি কোন ভাবে ম্যানেজ করতে বললাম। এদিকে আমি ওর ছবি আম্মুকে দেখালাম আম্মুর পছন্দ হলো। নানা, নানী, খালাম্মা, মামী সবারই পছন্দ হলো। কিন্তু জব ছাড়া কেউই রাজী হলোনা বিয়ের ব্যাপারে। উর্মিও চাচ্ছেনা জব ছাড়া কিছু একটা করতে। ঊর্মি বললো, আমার কথা ওর পরিবারকে বলতে পারবে না যতক্ষন আমি জব না পাই।


মসজিদের মাইক থেকে যোহরের আজান ভেসে আসছে। এখনো ঊর্মির আসার খবর নেই। আসবে কি না সন্দেহ হলো। ফোন দেবার জন্য মোবাইলটা হাতে নিলাম, কিন্তু দিলাম না। এতোবার কলদিলে বিরক্ত হয় যদি! একমগ ব্লাক কফি অর্ডার করলাম।


সম্পর্কের ৪-৫ দিনের মাথায় আমি দ্বিতীয়বারের মতো ঊর্মির সাথে দেখা করতে যাই। সেদিন ওর টেষ্ট এক্সাম চলছিলো। আমি ওকে সারপ্রাইজ দেবার জন্য না বলেই যাই। প্রায় দু ঘন্টার মতো ওয়েট করি। ও হল থেকে বেড় হলে আমি ফোনে বলি যে, আমি কলেজেই আছি। ও মিট করতে চাচ্ছিলোনা। বলছিলো বান্ধবীরা আছে, আমার কথা ও কাউকেই জানাতে চাচ্ছে না। আমি খুব করে অনুরোধ করাতে ৫ মিনিটের জন্য দেখা করে। সেদিনও তার মুখ নেকাবে ঢাকা ছিলো।


রিলেশনের ১৭ তম দিনে আমরা তৃতীয়বারের মতো মিট করি। সেদিনও আমার লেট হয়। তবুও গিফট নিয়েই যাই। এক প্যাক চকলেট আরেকটা গোলাপ। লেট হয়ে যাচ্ছিলো বলে র্যাপিং করার সময় পাইনি। একটা ঠোঙ্গায় করে নিয়ে যাই। কলেজে যেয়ে দেখি ঊর্মি আজ নেকাব ছাড়াই এসেছে। এই প্রথম আমি সরাসরি তার চেহাড়া দেখতে পাই। ছবিতে ও যেমন সুন্দর বাস্তবে তার চেয়ে বেশী সুন্দর লাগছিলো। আমাকে দেখে অবশ্য সে অল্প রাগ দেখালো। কারন আমি খুব লেট করে ফেলেছিলাম।

ঠোঙ্গাটা এগিয়ে দিয়ে বল্লাম,
--এই নাও, তোমার জন্য সিঙ্গারা নিয়ে এসেছি। এতোক্ষন ওয়েট করে করে নিশ্চই প্রচুর খিদে লেগেছে।
__ লাগবেনা, আপনার সিঙ্গারা আপনিই খান। বেশীক্ষণ থাকতে পারবো না, বাসায় যাবো।
__আরে নাওতো, ঠোঙ্গা খুলেই দেখো।

ঠোঙ্গার ভেতর চকলেট আর গোলাপ দেখে ও খুশি হলো। ধন্যবাদ দিলো। ও কোন মতেই ক্যাম্পাস থেকে বেড় হতে চাচ্ছিলো না। অনেক রিকোয়েস্টের পরে নদীর পারে যেতে রাজি হলো। আমরা নদীর পারে প্রায় ১ ঘন্টা ঘুরলাম। আমি আমার হাতটা বাড়িয়েছিলাম ওর হাত ধরবো বলে। কিন্তু ও চাচ্ছিলো না হাত ধরতে। আমি হাত গুটিয়ে পকেটে ভরে নিলাম।

রিলেশন চলাকালীন সময়তেও আমাদের ঝগড়া হতো খুব। একে অন্যকে খুব চালাক ভাবতাম আমরা। আবার যখন শান্ত থাকতাম তখন মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি কাপল। আমি খুব জেলাসি ছিলাম। ওর পাশে কোন ছেলে দেখলে আমার খুব লাগতো। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো একজন ছেলে। সেটা নিয়েও আমার জ্বলতো খুব। এমনকি ও ফেসবুকে কোন নায়কের ছবি দিলেও আমার লাগতো খুব, সহ্য করতে পারতাম না। এজন্য মাঝে মাঝে অভিমান করে বসে থাকতাম। দিন যত যাচ্ছিলো তিক্ততা বাড়ছিলো। ও একদিন বললো, ও আমাকে বিলিভ করতে পারেনা। আমি বলতাম, ভালোবাসা মানেই হচ্ছে বিশ্বাস। তুমি যদি বিশ্বাসই না করো তাহলে কিসের ভালোবাসা এটা?


ও প্রেম করার থেকে বিয়েটা বেশী গুরুত্ব দিতো। তাতে আমিও খুশি, কারন আমিওতো বিয়েই করতে চাই। আমি বলেছিলাম, ভালোবাসাটা পবিত্র রাখার চেষ্টা করবো। খুব দ্রুতই বিয়ে করার চেষ্টা করবো, তুমি শুধু জবটা হওয়া পর্যন্ত আমার জন্য ওয়েট করো।
মাঝে মাঝে আমার অনুভব হতো, আমার প্রতি ওর কোন টান নেই। নিজেইতো মুখে বলে যে বিলিভ করেনা। হয়ত ঐভাবে ভালোও বাসেনা।
এই অনুভূতি গুলো শেয়ার করলে ও বলতো, ও বিয়েতে বিশ্বাসী। বিয়ের পরে ভালোবাসবে। এখন তেমন পছিবল না।


আমি তখন বলতাম, আমার প্রতি যদি তোমার টান, বিশ্বাস, ভালোবাসা না থাকে তাহলে আমি কেনো এতো আগে আগেই তোমার জন্য কষ্ট করবো? আমিতো আগে প্রতিষ্ঠিত হতে পারি, এরপর চার পাঁচ বছর পরে বিয়ে করতে পারি। তুমি বলেছো আমাকে ভালোবাসো, তোমার জন্য আর্লি করতে চাচ্ছি সবকিছু। এখন যদি বলো যে ভালোবাসনা তাহলে আমি এতো আর্লি এতোকিছু করতে যাবো কেনো? কার জন্য করবো? যে আমাকে ভালোবাসেনা তার জন্য?
এটা বলার পরে ও কিছুটা চুপ থেকে বলতো যে, ভালোবাসি।

এর মধ্যে ওর আরেকটা সমন্ধ আসলো। সেই সময়টাতে ওর সাথে আমার ঝগড়া চলছিলো। ও রাগ করে খুব সাজুগুজু করে ছেলে পক্ষের সামনে গেলো। ওরা খুব পছন্দ করলে ওকে। ছেলেকেও ঊর্মির পরিবার পছন্দ করলো। ঊর্মি আমাকে বললো যে, ছেলে দেখতে চমৎকার। আমি প্রশ্ন করলাম, কে দেখতে ভালো? ঐ ছেলে নাকি আমি? ঊর্মি বললো, কেউ কারো চেয়ে কম না। কথাটা আমার অন্তরে রক্তক্ষরণ ঘটালো। হৃদপিণ্ডটাকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো। প্রবাসী ছেলে, ছুটিতে এসেছে বিয়ে করেই চলে যাবে। কি করবো বুঝতে ছিলাম না, ঊর্মিকেও কি বললবো মাথায় আসছিলোনা। বল্লাম, অন্ততপক্ষে ৬ মাস ওয়েট করো। কিন্তু কাজ হলোনা। বুঝতে পারছিলাম ঊর্মির মনেও ছেলেটাকে ধরেছিলো। অজথা পথের কাটা হয়ে থাকলাম না। ওকে বল্লাম, তুমি যেটা তোমার জন্য ভালোমনে করো সেটা করো। ঊর্মির বিয়ের সপ্তাহখানি পরেই আমার ভিসা হয়ে গেলো। MBA করার জন্য কানাডা চলে গেলাম। বন্ধুত্বটা ১ বছরের হলেও আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মাত্র দু'মাস।


অনেকের কাছে ২-৩ মাসের প্রেমটা কোন প্রেম না। কিন্তু আমার কাছে সেটা ওরকম ছিলোনা। এই দুইটা মাসছিলো আমার জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ সময়। ঊর্মিই ছিলো আমার প্রথম ভালোবাসা। কানাডা যেয়ে অনেক মেয়ে বন্ধু পাই। কিন্তু ঊর্মির জায়গাটা কেউ দখল করতে পারেনি। ৫ বছর ধরে সেই দুই মাসের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি আমি। এটা কতটা কষ্টের তা বলে বোঝাতে পারবো না। কিছু কথা বলার জন্য উপযুক্ত শব্দ পাওয়া যায় না।

একজন মহিলা এসে সালাম দিলো আমাকে। বোরখা পরা, নেকাব দিয়ে মুখ ঢাকা। হ্যা এটাইতো ঊর্মি। অনেক বদলে গেছে। আগেতো অনেক স্লিম ছিলো। এখন মোটা হয়েছে কিছুটা। সালামের উত্তর দিতে দিতে আমি উঠে দাড়ালাম। ওকে বসতে বল্লাম। দুজনে আবার বসলাম। বসে ও নেকাব খুলে ফেললো। আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। একটু মোটা হওয়াতে ওকে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।
--কেমন আছেন?

-- হ্যা ভালো। তুমি কেমন আছো?
--এইতো।
--আসতে অনেক কষ্ট হলো। তাইনা?
--জ্যামে আটকে ছিলাম। অসহ্য লাগছিলো। সরি, আপনাকে অনেক্ষন ওয়েট করালাম।
--না, ঠিক আছে। পাঁচ বছর আগের প্রতিশোধ নিলা। হাহাহা
আগের কথা স্বরন করাতে ওর মুখটা মলিন হয়ে গেলো। আমি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলাম।
--আচ্ছা বলো কি খাবে?
--আমি শুধু জুস নেবো।
--আরে অনেক বেলা হয়েছে। আমরা লাঞ্চ করি।
--না, বাড়ি যেয়ে করবো।
--না, কোন কথা চলবে না। লাঞ্চ করেই যাবা।
আমি লাঞ্চের অর্ডার করলাম।
ঊর্মি আমাকে বললো,
--তো, আবার কানাডা চলে যাবেন?
--হুম, ৩মাসের ছুটিতে এসেছি। ওখানে একটা কম্পানিতে জব করি।
--এবার কি বিয়ে করতে আসলেন?
--ঠিক সেরকম না, বাবা মাকে দেখতে আসলাম। মা অবশ্য বলতেছে বিয়ে করে যেতে।
--তো, করে ফেলেন। দেরি করা ঠিক হবেনা।
--হুট হাট কিছু করতে চাচ্ছিনা। বিয়ে করলে ওখানেও করা যায়। অনেক বাঙালি আছে ওখানে। আমি আসলে মনের মানুষ চাই।
-- তো, এতোদিনে পেলেন না মনের মানুষ?
--পেয়েছিলাম।

ঊর্মি খুব চালাক। এটা আগে থেকেই। ও আমার কথার মানে বুঝতে পারলো। কিন্তু প্রতিউত্তরে কিছু বল্লো না। আমাকেই আবার বলতে হলো।
--তো, তোমার দিনকার কেমন যাচ্ছে?
--জানেনইতো কেমন যাচ্ছে। পাপ্পু ভাইতো সব বলছেই।
--হুম, তা জানি। তো, সামনে কি করবা ভাবছো?
--আমার আর কি করা আছে বলেন? জীবনটাতো শেষ। একটা জব করতেছি এখন। এভাবেই চালিয়ে দেবো বাকি জীবন। আর কোন আশা & চাওয়া পাওয়া নেই।
--অনেকের জীবনেই এমন এক্সিডেন্ট হয়। তুমি ভেঙ্গে না পরে ঘুরে দাড়াও। এখনো জীবনে অনেক কিছু করার আছে।
--দেখা যাক কি হয়!
-- ঊর্মি, তুমি এখনো আমার অন্তরে আছো। তুমি আমার হাতটা ধরবা?
-- না, তা হয়না। আপনার খারাপ সময়তেই থাকতে পারিনি। এখন আর সেটা পারবো না। নিজের কাছে আমাকে আর অপরাধী বানাবেন না।


--ঊর্মি আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। প্লিজ তুমি আমার সাথে চলো।
--না, আমিতো বল্লামই। আমি সেটা পারবো না। প্লিজ, আমাকে নিয়ে আপনি ভাবা বন্ধ করেন। আমি কারো করুনা চাচ্ছি না।
-- আমি তোমাকে করুনা করছি না।
-- থাক বাদ দেন। আমি আপনাকে ভালোবাসিনা।
--ওহ্, আচ্ছা।
-- আপনার বাসার সবাই কেমন আছে?
--হুম ভালো।


লাঞ্চ করার পরে ঊর্মি বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আবারো আমি তাকে হাড়ালাম। বুঝাতে পারলাম না আমি কতটা তাকে ভালোবাসি। আমার মনের কষ্ট মনেই রইলো। কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না। আমি যাবো, বারবার তোমার কাছে যাবো। আমি আমরন চেষ্টা করে যাবো। যতবার ফিরিয়ে দিবা ততবারই যাবো। আমি তোমাকে চাই,আবারো চাই, বারবার চাই ।